
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ট্রাক, যা প্রতি বছর প্রায় ২০.২ বিলিয়ন টন পণ্যের দুই-তৃতীয়াংশ বহন করে। কিন্তু Parallel Systems-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ম্যাট সোউল এই বাস্তবতা বদলাতে চান। তিনি শত বছরের পুরনো রেল ব্যবস্থাকে আধুনিকভাবে রূপান্তর করতে চাইছেন, যেখানে রেল ব্যবস্থাটি হবে স্বয়ংক্রিয় এবং ব্যাটারিচালিত। লস অ্যাঞ্জেলেস-ভিত্তিক এই কোম্পানিটি এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করছে যা ব্যাটারিচালিত এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে, এবং এটি বিদ্যমান রেললাইন ও সফটওয়্যারের সাথেই কাজ করতে পারে। সোউল মনে করেন, প্যারালেল সিস্টেমসের প্রযুক্তি ব্যবহারে কোম্পানিগুলোর জন্য ট্রাকের বদলে রেল ব্যবহার করা আরও সস্তা হবে, বিশেষ করে ছোট দূরত্বের পণ্য পরিবহনে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, সাধারণত রেলপথ খুব বেশি ব্যবহার করা হয় না কারণ ট্রেন চালাতে বড় এবং ব্যয়বহুল ইঞ্জিন প্রয়োজন হয়, যা অনেকগুলো পণ্যবাহী বগি একসাথে দীর্ঘ দূরত্বে নিয়ে যায়। কিন্তু স্বল্প দূরত্বে এই ধরণের ট্রেন চালানো কার্যকর হয় না, তাই ব্যবসায়ীরা প্রায়ই ট্রাকের দিকে ঝোঁকে। প্যারালেল এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে যাতে ট্রেনের বগিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে একে অপরের সাথে সংযুক্ত এবং বিচ্ছিন্ন হতে পারে। ফলে বিভিন্ন আকারের ডেলিভারির জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হয় এবং মানুষকে আর ঝুঁকিপূর্ণভাবে হাত দিয়ে সংযোগ বা বিচ্ছিন্ন করার দরকার পড়ে না। এই প্রযুক্তি ট্রেনের ব্রেকিং সিস্টেমকেও আরও উন্নত করেছে, যাতে এটি প্রচলিত ট্রেনের তুলনায় অনেক দ্রুত থামতে পারে।সোউল বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ নতুন কাঠামো ব্যবহার করছি যাতে ছোট আকারেও ট্রাকের মতো লাভজনক পরিবহন সম্ভব হয়। আমাদের যানটি বিদ্যমান রেল অবকাঠামোর সাথে মানানসই এবং এটি প্রচলিত ট্রেনের সাথেও চলতে পারে। আমরা প্রচলিত মালবাহী ট্রেনকে বদলাতে চাই না।”

প্যারালেল সিস্টেমস যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেলরোড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদন পেয়েছে, যাতে তারা জর্জিয়ার একটি রুটে তাদের প্রযুক্তির পরীক্ষা চালাতে পারে। এই পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে তারা সাভানার বন্দরের কাছ থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন বিতরণ কেন্দ্রে ১৬০ মাইল পথজুড়ে ট্রায়াল চালাবে।এই সাফল্যের পাশাপাশি কোম্পানিটি সম্প্রতি ৩৮ মিলিয়ন ডলারের সিরিজ বি ফান্ডিং পেয়েছে, যার নেতৃত্ব দিয়েছে অ্যানথোস ক্যাপিটাল। এতে আরও অংশ নিয়েছে কোয়াবোরেটিভ ফান্ড, কংগ্রুয়েন্ট ভেঞ্চারস এবং রায়ট ভেঞ্চারস। নতুন এই বিনিয়োগ মিলিয়ে কোম্পানির মোট ফান্ডিং ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি হয়েছে। এই অর্থ ব্যবহার করা হবে পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণে, এবং তারা ২০২৬ সালে প্রথম বাণিজ্যিক লঞ্চ করার আশা করছে। কোয়াবোরেটিভ ফান্ডের পার্টনার সোফি বাকালার বলেন, যদিও প্যারালেল তাদের মূল বিনিয়োগ নীতির মধ্যে পড়ে না, তবুও তাদের এক প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তার মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পর কোম্পানিটিকে তারা বেশ আগ্রহী মনে করেন। তিনি বলেন, “এই দলটি বিশেষভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। এরকম বড় চ্যালেঞ্জ খুব কম মানুষই নিতে পারে।” যদিও সোউলের রেলে সরাসরি কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই, তিনি ২০ বছর অ্যারোস্পেসে কাজ করেছেন, যার মধ্যে ১৩ বছর তিনি SpaceX-এ ছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা সবসময় নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতাম। আমি অ্যাভিওনিক্সে কাজ করতাম, যেটা রকেট নিয়ন্ত্রণের সফটওয়্যার ও ইলেকট্রনিক্স। সেখান থেকেই আমার কৌতূহল জন্মায় – এই প্রযুক্তিগুলো অন্য অনেক পিছিয়ে থাকা খাতে কিভাবে প্রয়োগ করা যায়।” ২০২০ সালে তিনি প্যারালেল শুরু করেন এবং এখন পাঁচ বছর পর, প্রযুক্তিটি তৈরি হয়েছে এবং কোম্পানিটি বাণিজ্যিকভাবে এগোতে প্রস্তুত। যদিও কোম্পানিগুলোর জন্য তাদের পরিবহন কৌশল বদলানো বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবুও ভিন্ন সমাধানের জন্য বাজারে চাহিদা রয়েছে বলে জানান সোউল। তারা ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগ্রহ পাচ্ছেন, কিন্তু আপাতত যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারে মনোযোগ দিচ্ছেন। এই খবর এমন সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা চলছে। যদি শুল্ক কার্যকর হয়, তাহলে অনেক কোম্পানিই খরচ কমানোর উপায় খুঁজবে, তখন প্যারালেলের মতো সমাধানের চাহিদা আরও বাড়বে বলে মনে করেন বাকালার। সোউল বলেন, “এটা প্রজন্মগত পরিবর্তনের মতো একটা উদ্ভাবন। মালবাহী পরিবহন শিল্পে এমন পরিবর্তন খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু আমাদের প্রযুক্তি এমন দিকগুলোকে স্পর্শ করছে, যেগুলো সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।”