
এটা যেন একবিংশ শতাব্দীর কোনো ভৌতিক সিনেমার সূচনা: আপনি ভাবছিলেন আপনার ব্রাউজার ইতিহাস ব্যক্তিগত, অথচ সেটি প্রকাশ্যই ছিল, আপনি জানতেন না। ঠিক এমনটাই ঘটছে মেটার নতুন “Meta AI” অ্যাপে, যেখানে অসংখ্য মানুষ তাদের চ্যাটবটের সঙ্গে করা কথোপকথনগুলো অজান্তেই প্রকাশ করছেন।
যখন আপনি Meta AI-কে কোনো প্রশ্ন করেন, তখন একটি “শেয়ার” বোতাম দেখা যায়, যেখানে ক্লিক করলে একটি পোস্ট প্রিভিউ দেখায় এবং সেখান থেকে আপনি সেটি প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু অনেক ব্যবহারকারী বুঝতেই পারছেন না যে, তারা আসলে এই টেক্সট চ্যাট, অডিও ক্লিপ এবং ছবি বিশ্বব্যাপী শেয়ার করছেন।
Meta AI অ্যাপে মানুষ ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার উপায় জানতে চাচ্ছেন, পারিবারিক সদস্যদের সাদা কলারের অপরাধে গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে প্রশ্ন করছেন, এমনকি কোনো কর্মচারীর পক্ষে চারিত্রিক সনদ লেখার অনুরোধ করছেন – সঙ্গে পুরো নামও দিচ্ছেন। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ র্যাচেল টোবাক আরও কিছু ভয়ংকর উদাহরণ দেখেছেন যেখানে ব্যক্তিগত ঠিকানা, আদালতের সংবেদনশীল তথ্য পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে।
TechCrunch যখন এই বিষয়ে মেটার সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখন প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Meta AI অ্যাপের কিছু স্ক্রিনশটে দেখা যায়:
- কেউ জুকারবার্গকে গর্ভবতী করে এক পোকাকে বিয়ে করাচ্ছে,
- কেউ আবার তার উরুর ভেতরের দাগ নিয়ে প্রশ্ন করছে,
- অন্য একজন জিজ্ঞাসা করছে রাশিয়া দিবসে গোকুকে কীভাবে উদযাপন করানো যায়।
এইসব প্রশ্ন শুধু বিব্রতকরই নয়, বরং ভয়ংকর গোপনীয়তা লঙ্ঘনের উদাহরণ। Meta স্পষ্টভাবে জানায় না ব্যবহারকারী যখন কোনো পোস্ট করেন, সেটি কোন প্রাইভেসি সেটিংসে আছে বা কোথায় শেয়ার হচ্ছে। যদি আপনি Instagram দিয়ে Meta AI-তে লগ ইন করেন এবং আপনার Instagram অ্যাকাউন্ট পাবলিক হয়, তাহলে আপনি “বিগ বুটি নারী” খুঁজে পাওয়ার পরামর্শ চাইলেও সেটি বিশ্বজনীনভাবে প্রকাশ হয়ে যায়।
এই পরিস্থিতি সহজেই এড়ানো যেত যদি Meta এমন অদ্ভুত ধারণা না করতো যে মানুষ একে অপরের AI চ্যাট দেখতে চাইবে। কেউ যেন বুঝতেই পারেনি এটি কী ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। Google কখনো তার সার্চ ইঞ্জিনকে সোশ্যাল মিডিয়া বানানোর চেষ্টা করেনি, আর AOL যখন ২০০৬ সালে কিছু অনুসন্ধান ইতিহাস ছদ্মনামে প্রকাশ করেছিল, তখনও সেটি চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।
Appfigures অনুযায়ী, Meta AI অ্যাপটি এপ্রিল ২৯-এ রিলিজের পর থেকে মাত্র ৬.৫ মিলিয়ন বার ডাউনলোড হয়েছে।
যদিও এটি একটি নতুন ডেভেলপারের জন্য চমৎকার অর্জন, কিন্তু এখানে কথা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম ধনী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের – যারা এই প্রযুক্তিতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
আরও কিছু স্ক্রিনশটে দেখা যায়:
- কেউ Meta-কে অনুরোধ করছে যেন তার ফোন নম্বর Facebook গ্রুপে পোস্ট করে নারী বন্ধু খুঁজে দিতে,
- কেউ আবার একটি কর্মচারীর পক্ষে আইনি চিঠি লিখতে বলছে,
- এমনকি একটি AI দ্বারা তৈরি “ডিভোর্স কোর্টে সুপার মারিও” এর ছবি পর্যন্ত শেয়ার করা হয়েছে।
প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে এইসব নিরীহ প্রশ্নগুলো এক ভয়াবহ ভাইরাল ঝড়ে পরিণত হচ্ছে। কেউ আবার নিজের রেজ্যুমে শেয়ার করে সাইবারসিকিউরিটি জব চাচ্ছে, কেউ “Pepe the Frog” প্রোফাইল দিয়ে জিজ্ঞেস করছে পানির বোতলে কীভাবে বং বানানো যায়।
Meta যদি সত্যিই চায় যে মানুষ তাদের Meta AI অ্যাপ ব্যবহার করুক, তাহলে এই ধরনের বিব্রতকর পাবলিক প্রদর্শন হয়তো এক পদ্ধতি, কিন্তু নিঃসন্দেহে এটি এক ভয়ংকর দৃষ্টান্তও।
