
এই সপ্তাহে লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে Google Cloud Next 2024 সম্মেলন, যেখানে গুগল তাদের নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি ও ফিচার ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল তাদের সর্বশেষ এআই চিপ “Ironwood” এবং নতুন মডেল “Gemini 2.5 Flash“। এই ঘোষণাগুলোর পাশাপাশি, গুগল বেশ কিছু উদীয়মান ও আকর্ষণীয় এআই স্টার্টআপের নামও সামনে এনেছে, যারা এখন থেকে গুগল ক্লাউড ব্যবহার করবে তাদের প্রযুক্তি উন্নয়নে। এই স্টার্টআপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো Safe Superintelligence(SSI), যা OpenAI-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়া সুটস্কেভারের নতুন উদ্যোগ। এরপর রয়েছে Anysphere, যারা তৈরি করেছে Cursor নামের একটি জনপ্রিয় AI কোড এডিটর, যার বর্তমান মূল্যায়ন প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। Cursor গুগল ক্লাউডে Claude মডেল ব্যবহার করে, এবং এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলো মাইক্রোসফটের GitHub Copilot। আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম Hebbia, যাদের প্রযুক্তি বড় বড় ডকুমেন্ট থেকে তথ্য খুঁজে বের করে প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। এটি আইনজীবীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং গুগলের Gemini মডেল ব্যবহার করছে। Magic নামের আরেকটি স্টার্টআপ কোড লেখা ও গবেষণা স্বয়ংক্রিয় করার জন্য এআই মডেল তৈরি করছে। এই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে Alphabet-এর বিনিয়োগ শাখা CapitalG এবং গুগলের সাবেক সিইও এরিক শ্মিট। তারা গুগল ক্লাউডের GPU ব্যবহার করছে। Physical Intelligence নামের একটি স্টার্টআপ রোবটের জন্য মৌলিক সফটওয়্যার তৈরি করছে। এর প্রতিষ্ঠাতারা Google DeepMind-এর সাবেক সদস্য এবং প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করেছে Sequoia, Jeff Bezos, এবং Thrive Capital। ফ্রান্সভিত্তিক Photoroom নামের স্টার্টআপটি এআই-চালিত ছবি সম্পাদনার টুল তৈরি করে এবং গুগলের Veo 2 ও Imagen 3 মডেল ব্যবহার করে ভিডিও ও ছবি তৈরি করে। অন্যদিকে, Synthesia বাস্তবমতো এআই অ্যাভাটার তৈরির জন্য পরিচিত, এবং এটি NEA ও Google Ventures-এর নেতৃত্বে ১৮০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। গুগল এই সব প্রতিভাবান এবং উদ্ভাবনী স্টার্টআপদের তাদের ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করে মাইক্রোসফট আজুর ও অ্যামাজন AWS-এর সঙ্গে AI দৌড়ে এগিয়ে থাকার কৌশল নিয়েছে। এই সম্মেলনে গুগল আরও ঘোষণা করেছে যে, Lightspeed এখন থেকে তাদের নতুন ভিসি পার্টনার হবে এবং তারা স্টার্টআপগুলোকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত ক্লাউড ক্রেডিট সুবিধা দেবে। এর মাধ্যমে গুগল আরও নতুন স্টার্টআপকে আকৃষ্ট করতে চায় এবং তাদের AI ভিত্তিক উদ্যোগকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করতে চায়।
আরও কিছু AI স্টার্টআপ যারা Google Cloud-এ যোগ দিয়েছে:
- Augment Code – কোড লেখার জন্য AI এজেন্ট
- Autoscience – বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহায়ক AI
- Big Sur AI – ই-কমার্সের জন্য পার্সোনালাইজড রিকমেন্ডেশন
- Captions – ভিডিও বানানো ও এডিটের টুল
- Eon.io – স্বয়ংক্রিয় ব্যাকআপ ও রিকভারি
- fal is – টেক্সট থেকে ছবি ও ছবি থেকে ভিডিও তৈরি
- Spot AI – সিকিউরিটি ক্যামেরায় AI
- Story – ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে আইপি লাইসেন্স ও সংরক্ষণ
- StudyHall AI – শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সহায়ক
- Ubie – জাপানি হেলথটেক, উপসর্গ বিশ্লেষণ করে
- Udio – গান তৈরি করার AI
- Ufonia – রোগীদের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় স্বাস্থ্য পরামর্শ
- Wagestream – দাতব্য সংস্থার তৈরি ফিনান্সিয়াল ওয়েলনেস প্ল্যাটফর্ম
- Wondercraft – জেনারেটিভ AI দিয়ে বাস্তবধর্মী অডিও কনটেন্ট তৈরি
এই স্টার্টআপগুলো দেখাচ্ছে যে ভবিষ্যতের এআই প্রযুক্তি কেবল গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিকেও গভীর প্রভাব ফেলছে। গুগল এই প্রতিভাগুলোকে তাদের ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে ভবিষ্যতের এআই বিশ্ব গড়ার এক বিশাল পদক্ষেপ নিচ্ছে।